চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের আগামী দিনের চাহিদা পূরণ করতে পতেঙ্গা-হালিশহরের সমুদ্র উপকূলে নির্মাণ করা হচ্ছে বে টার্মিনাল। টার্মিনালটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ বা পিপিপি ভিত্তিতে করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বে-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পটি পিপিপি (সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব) এবং জি-টু-জি (সরকার টু সরকার) পদ্ধতিতে সম্পন্ন করতে হবে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যে কেবিনেট কমিটি অন ইকোনমিক অ্যাফেয়ার (সিসিইএ) কমিটির অনুমোদন প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পটি নিয়ে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ আগ্রহী হলেও শেষ পর্যন্ত দ্য পোর্ট অব সিঙ্গাপুর অথরিটি (পিএসএ) এবং সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল (আরএসজিটি) বেশ তোড়জোড় চালাচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত এই দুই প্রতিষ্ঠানের কোনো একটির সাথে বা নতুন কোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করতে হয় তা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিষয়টিতে অনেকগুলো টেকনিক্যাল ব্যাপার থাকবে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট একজন বিশেষজ্ঞ জানান, কার সাথে চুক্তি হচ্ছে সেটি অনেক পরের ব্যাপার। বিষয়টি নিয়ে অনেক আলোচনা হবে। সরকারের নিয়োগ দেয়া ট্রানজেকশন এডভাইজার বিষয়টি নিয়ে দর কষাকষি করবেন। ঝুঁকি নিয়ে আলোচনা করবেন। দীর্ঘ আলোচনা শেষে ‘উইন-উইন’ পরিস্থিতি তৈরি হলেই কেবল চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, এখন কোনো বিদেশী অপারেটর যদি বে টার্মিনালে অপারেশন করতে এসে শর্ত দেয় যে ‘ওই টার্মিনালে হ্যান্ডলিং করার জন্য বার্ষিক ২০ লাখ টিইইউএস কন্টেনার দেয়ার পরই বাকি কন্টেনার চট্টগ্রাম বন্দর হ্যান্ডলিং করতে পারবে’ তাহলে তাদের সাথে তো চুক্তি করা যাবে না। এসব বিষয় নিয়ে অনেক আলাপ আলোচনা করার পরই কেবল বে টার্মিনালের অপারেটর নিয়োগ চূড়ান্ত হবে।
অপারেটর নিয়োগের বিষয়টির পাশাপাশি প্রকল্পটির দুটি খাত নিয়ে আলাদা করে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এর একটি হচ্ছে ব্রেক ওয়াটার নির্মাণ। বলা হচ্ছে, সাগরে বাঁধ না দিয়ে বে টার্মিনাল গড়ে তোলা সম্ভব হবে না। অপরটি হচ্ছে চ্যানেল ড্রেজিং। হালিশহর উপকূলে যে চ্যানেলটি পাওয়া যাচ্ছে তাতে ড্রেজিং না করলে জাহাজ ভেড়ানো যাবে না। এই দুটি কাজ বে টার্মিনালের অনেক বড় এবং প্রধান কাজ। এই দুইটি কাজ সম্পন্ন করতে কয়েক হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন। এই বিনিয়োগ অনেকটা অনুৎপাদনশীল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। টার্মিনাল পরিচালনা করতে আসা কোনো বিদেশী অপারেটর ব্রেক ওয়াটার নির্মাণ এবং চ্যানেল ড্রেজিং এ বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এই বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে তার রিটার্ন পাওয়াও বিদেশী অপারেটরের জন্য কঠিন।
বিশেষ করে বিশ্ব ব্যাংক এবং কোরিয়ার এসবিএফসি তাদের প্রস্তাবনাও দিয়েছে। আরো অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান আগ্রহী। এদের মধ্যে কেউ কেউ অত্যন্ত স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদী কিস্তিতে এই ঋণ প্রদান করতে চাচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে কোন সংস্থা থেকে ঋণ নিলে বন্দর কর্তৃপক্ষ লাভবান হবে তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আজ বিকেলে ঢাকায় মন্ত্রণালয়ে উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে।