রুমা(বান্দরবান)প্রতিনিধি
বান্দরবানে রুমা উপজেলার নতুন সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট(কেএনএফ) আতঙ্কে হ্যাপিহিল, মুননোয়াম, আরথাহ, বাসত্লাং ও মুয়ালপি পাড়াসহ প্রায় ৭শত জনের অধিক গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে। এর মধ্যে মুয়ালপি মারমা সম্প্রদায়ের ৫২টি পরিবার আতঙ্কিত হয়ে গত শনিবার সন্ধ্যায় পালিয়ে আসা ঐ গ্রামবাসীরা রুমা সদরের মারমা ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন ভবনে আশ্রয় নিয়েছে। আবার কোন কোন পরিবার পার্শ্ববর্তী গ্রামে আশ্রয় নিয়েছে এবং কেউ কেউ জঙ্গলে পালিয়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে হ্যাপিহিল,বাসত্লাং, আরথাহ ও মুননোয়াম পাড়ার (বম জনগোষ্ঠী) গ্রামবাসীরা পালিয়ে বম কমিউনিটি ভবনে আশ্রয় নিয়েছে ২৮জনের অধিক। বাকি বম জনগোষ্ঠীরা কোথায় অবস্থান করেছে তা এখনো জানা যায়নি।
গত ২৮জানুয়ারি শনিবার সন্ধ্যায় পাইন্দু ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মুয়ালপি পাড়াবাসিন্দারা পালিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছেন পাইন্দু ইউপি চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা।
তিনি আরো জানিয়েছেন, পালিয়ে আসা গ্রামবাসিরা যে যার মতো ঠায় নিয়েছে। অধিকাংশ গ্রামের লোকেরা নারী-পুরুষ ও শিশুসহ ৪০জন আশ্রয় নিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন, চেয়ারম্যান,মেম্বার ও বিহারধ্যক্ষসহ সচেতন নাগরিকেরা পালিয়ে আসা লোকজনদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত না হওয়ার পর্যন্ত তারা রুমা সদরে অবস্থান করবে।
স্থানীয় গ্রামবাসী সূত্রে জানা যায়, রুমা সদর থেকে ৮কিলোমিটার দূরে মুয়ালপি পাড়া গ্রাম। ঐ গ্রামের মারমা সম্প্রদায়ের ৫২টি পরিবার বসবাস। দুর্গম এলাকার হওয়াতে গ্রাম ভিতর দিয়ে কেএনএফ প্রতিনিয়ত চলাচল করত। তাদের চলাচলের কারণে মুয়ালপি পাড়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদানের ব্যবস্থা বন্ধ রাখা হয়েছে সাথে গ্রামবাসীরা আতঙ্কিত হয়ে ঘর থেকে বের হতে পারছে না এবং কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট(কেএনএফ) অত্যাচারে সবাই ভয়ে থাকে। তাই তারা বন্দুক যোদ্ধে গেলে গ্রামবাসীরা টানা পাঁচ ঘন্টা পায়ে হেঁটে রুমা বাজারে পৌচ্ছান। পরে আশ্রয় নেওয়ার গ্রামবাসিদের মাঝে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর রুমা জোনের কর্তৃক ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, ওই গ্রামের কারবারী জামাই লুমেঅং মারমাকে কেএনএফ’রা ধরে নিয়ে যায় পরে তাকে মারধর করে। আহত অবস্থায় জঙ্গল থেকে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে গ্রামবাসিরা। ঘটনাটির পর ঐ গ্রামের লোকজনদের মাঝে আতঙ্ক শুরু হয় এবং গ্রাম থেকে বাইরে না যাওয়ার হুমকি দেন সন্ত্রাসীরা। পরে তারা নিরুপায়ে নিজেদের ঘর ছেড়ে আশ্রয় নেন রুমা সদরে।
গত শনিবার(২৮জানুয়ারি) রাতে সেনাবাহিনী- কেএনএফ গোলাগুলিতে এক কেএনএফ সদস্য ঘটনাস্থলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। পরেরদিন (রবিবার) সকালে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় রুমা থানার পুলিশ সদস্যরা লাশটি উদ্ধার করে সদর থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। তবে নিহত ব্যক্তির পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি সাথে একটি কাটুস বন্দুকও পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন রুমা সদর থানার ওসি মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন।
এদিকে রুমা জোন কমান্ডার জানিয়েছেন, এ ধরনের অভিযান চলমান থাকবে সাথে বিপুল পরিমানে সেনা সদস্যদের টহলে জোরদার করা হয়েছে।
রুমা উপজেলার নিবার্হী কর্মকর্তা মো: মামুন শিবলী গণমাধ্যমকর্মীদের সাৎক্ষাকারে বলেন, গ্রামবাসিরা পালিয়ে আসা খবর পেয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে পরিদর্শন করা হয়েছে। আবার কেউ কেউ আত্নীয়দের বাসায় আবার কেউ কেউ জঙ্গলে রয়েছে তবে আরো পালিয়ে আসা ব্যক্তিরা আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।