আবাসিকে গ্যাস সংযোগ স্থায়ীভাবে বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরপ্রেক্ষিতে প্রায় ২০ মাস আগে গ্যাস সংযোগ স্থগিতের যে আদেশ জারি করা হয়েছিল সেই আদেশ মোতাবেক আবেদনকারী গ্রাহকের ডিমান্ড নোটের টাকা ফেরত দানের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কোন প্রক্রিয়ায় টাকা ফেরত দেয়া হবে সেই বিষয়ে দু’একদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। গত বৃহস্পতিবার জ্বালানি মন্ত্রণালয় থেকে ডিমান্ড নোটের টাকা ফেরতদানের আদেশ বাস্তবায়ন সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে।
এদিকে, গ্যাস সংযোগ না দিয়ে সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম মহানগরীর ২৫ হাজার গ্রাহক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। যারা ডিমান্ড নোটের টাকা জমা দিয়ে গ্যাস সংযোগের আশায় দিন গুনছেন দীর্ঘদিন ধরে।
আবাসিকে গ্যাস সংযোগ না দেয়ার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কর্ণফুলী গ্যাস ঠিকাদার গ্রাহক ঐক্য পরিষদ। পরিষদের নেতারা জানিয়েছেন, এতদিন অপেক্ষায় রেখে হঠাৎ করে গ্যাস সংযোগ না দেয়ার এমন সিদ্ধান্তে গ্রাহকদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। পরিষদের পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রিট করার হুমকি দেয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানির ( কেজিডিসিএল) একজন কর্মকর্তা জানান, আবাসিকে নতুন করে গ্যাস সংযোগ না দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে জ্বালানি মন্ত্রণালয়। যেসব গ্রাহক ডিমান্ড নোট জমা দিয়েছেন তাদের টাকা ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামে প্রায় ২৫ হাজার গ্রাহক নুতন সংযোগ নিতে ডিমান্ড নোটের বিপরীতে ৩০ কোটি টাকারও বেশি জমা দিয়েছেন। যারা ডিমান্ড নোট জমা দিয়েছেন তারা শুধুমাত্র সংযোগ ফি ও সিকিউরিটির টাকা ফেরত পাবেন। একটি চুলার তিনমাসের অগ্রিম বিলের টাকা জমা দেয়াকে সিকিউরিটি হিসাবে ধরে নেয়া হয়।
আবাসিকে নতুন সংযোগ দেয়া বন্ধ করা হলে প্রয়োজনে আদালতের দ্বারস্থ হবেন, এমনটিই জানিয়েছেন কর্ণফুলী গ্যাস ঠিকাদার গ্রাহক ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম অলিউল্লাহ।
তিনি বলেন, গ্যাস কোম্পানি সংযোগ দেয়ার চুক্তি করেছে বলেই সড়ক কাটার ক্ষতিপূরণ, ভবনে গ্যাসের লাইন টানা, কারিগরিসহ নানাবিধ খরচ করেছেন অনেক গ্রাহক। এখন যদি বলা হয় গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে না তাহলে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে।
তিনি বলেন, ডিমান্ড নোট জমা দেয়ার পর সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের সাথে গ্যাস কোম্পানির লিখিত চুক্তি হয়। চুক্তির ১৮ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে গ্যাস সংযোগ দেয়ার কথা। অথচ ডিমান্ড নোটের টাকা জমা দেয়ার চার থেকে পাঁচ বছর সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। একদিন গ্যাস সংযোগ মিলবে এ আশায় অনেকে ব্যাংক ঋণ কিংবা ধার-দেনা করে বাড়ি নির্মাণ করেছে। আশায় আশায় রেখে এখন হঠাৎ করে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হলে গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। গ্যাস ঠিকাদার গ্রাহক ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম অলিউল্লাহ বলেন, পূর্ণাঙ্গ খবর জানার পর প্রয়োজনে আমরা আদালতে সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রিট করবো।
কেজিডিসিএল ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. ইকরাম চৌধুরী জানান, সিকিউরিটির টাকা ২৪০০ ও সংযোগ ফি ৬০০০ টাকা ফেরত দেয়া হলে একজন গ্রাহক ৮ হাজার ৪’শ টাকা ফেরত পাবেন। বাস্তবতা হচ্ছে ভিন্ন। অনেক গ্রাহক গ্যাস সংযোগের আশায় গ্যাস কোম্পানির অনেক কর্মকর্তার সাথে অনেক টাকা আনঅফিসিয়াল লেনদেন করেছে যা ফেরত পেতে অনেক হিমশিম খেতে হবে।
তিনি বলেন, গ্যাসের একটি সংযোগ নিতে একজন গ্রাহকের কমপক্ষে পঞ্চাশ হাজার টাকা খরচ হয়। কোম্পানির আদেশে ডিমান্ড নোট জমা দেয়ার আগে ঘাটে ঘাটে খরচ হয় গ্রাহকের টাকা। আবাসিকে গ্যাস সংযোগ বন্ধ হলে গ্যাসের অপচয় রোধ হবে তা কিন্তু সঠিক নয়। বরং এক শ্রেণীর লোক অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে নিজেরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।
জ্বালানি মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৯ সালের ২১ মে জারি করা আদেশে বলা হয়, ‘নতুন গ্যাস সংযোগের ক্ষেত্রে শিল্প, বিদ্যুৎ ও সার কারখানাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের সক্ষমতা বাড়ানো এবং ক্যাপটিভ পাওয়ারে উৎপাদন দক্ষতা কম থাকায় ক্যাপটিভ শ্রেণীতে নতুন গ্যাস সংযোগ দেওয়া নিরুৎসাহিত করতে হবে। ভবিষ্যতে সিএনজি, গৃহস্থালি ও বাণিজ্যিক শ্রেণীতে নতুন গ্যাস সংযোগ দেওয়া আগের মতো স্থগিত রাখতে হবে’।
প্রসঙ্গতঃ এখন দেশের মোট গ্যাস মজুতের পরিমাণ ১০ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফুটের (টিসিএফ) নিচে নেমে এসেছে। তাই এলএনজি আমদানি করে চাহিদা পূরণ করতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সরকার গৃহস্থালির জ্বালানির চাহিদা তরলীকৃত পেট্টোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) দিয়ে মেটানোর চিন্তা করছে। এজন্য গ্রাহকদের জন্য এলপিজি ন্যায্য মূল্যে দেওয়ার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে গ্যাস সংকটের কথা বলে আবাসিকে সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর ২০১৩ সালের শেষের দিকে আবার আবাসিক সংযোগ চালু করে। কিন্তু ওই বছর নির্বাচনের পর আবার অলিখিতভাবে জ্বালানি বিভাগ থেকে বিতরণ কোম্পানিকে আবাসিকে নতুন আবেদন নিতে নিষেধ করে দেওয়া হয়। তবে ২০১৯ সালে লিখিতভাবে আবাসিক সংযোগ স্থগিত রাখার আদেশ জারি করা হয়।