নারীর বিরুদ্ধে সহিংষতা, নারীদের বঞ্চনা, অন্যায্যতার সংগ্রাম নতুন বিষয় নয়। যুগে যুগে নারীর বিরুদ্ধে সহিংষতা ও সন্ত্রাস থেমে ছিলো না। করোনা মহামারীতে নারীরা সহিংষতা থেকে রেহাই পায়নি। আর ডিজিটাল বাংলাদেশের এ যুগেও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারীরা ডিজিটাল সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নারীদের চরিত্র হননের উদাহারনও কম নয়। তবে এক সময় নারীর প্রতি সহিংষতার বিরুদ্ধে সমাজের বিবেক জাগ্রত হতো। ঘৃনা, প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে উঠতো তৃণমূল পর্যায়ে থেকে। কিন্তু কালের পরিক্রমায় কিছু আর্ন্তজাতিক উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান নারীর প্রতি সহিংষতা প্রতিরোধের সামাজিক উদ্যোগগুলিকে বানিজ্যিকীকরণ করে ফেলেছেন। অনুদান প্রদানে স্থানীয়করণের কথা বলে বিডিং এর নামে অস্থানীয় ও ব্যবসায়িক ধারার প্রতিষ্ঠানগুলিকে প্রকল্প সহায়তা দিয়ে স্থানীয় ও স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে গড়ে উঠা উদ্যোগেগুলিকে বিভ্রান্ত করেছেন। ঐ সমস্ত প্রকল্প শেষে এ বিষয়ে আর কোন সাড়া শব্দ থাকে না। আর তৃণমূলে সমাজ পরিবর্তনে সামাজিক উদ্যোগগুলি পৃষ্টপোষকতার অভাবে ধুকে ধুকে মরছে। সেকারনে তৃণমূলে নারীরা নির্যাতিত হলে, ধর্ষনের শিকার হলে বা অন্যকোন সামাজিক অনাচারের শিকার হলে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ আর সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। এ অবস্থা থেকে পরিত্রান পেতে হলে তৃণমূলে সামাজিক উদ্যোগগুলিকে রাস্ট্রীয়, জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করতে হবে। একই সাথে নারীর বিরুদ্ধ সহিংষতাসহ যে কোন সামাজিক অনাচার মোকাবেলায় সংগঠিত প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সমাজের সকল শ্রেণী পেশার মানুষের সংঘবদ্ধ হবার তাগিদ দেয়া হয়েছে। ০৯ ডিসেম্বর ২০২০ইং নগরীর চান্দগাঁও আ/এস্থ আইএসডিই বাংলাদেশ মিলনায়তনে চিটাগাং সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট ফোরাম ও আইএসডিই বাংলাাদেশের উদ্যাগে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে ১৬ দিন ব্যাপী প্রচারণা কর্মসূচি উপলক্ষে “নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সমন্বিত পরিকল্পনা ও উদ্যোগ” শীর্ষক নাগরিক সংলাপে বিভিন্ন বক্তাগন উপরোক্ত মন্তব্য করেন।
বিশিষ্ট সাংবাদিক ও জেলা সামাজিক উদ্যোক্তা পরিষদের সভাপতি এম নাসিরুল হকের সভাপতিত্বে মুখ্য আলোচক ছিলেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন। সিএসডিএফ’র প্রকল্প সমন্বয়কারী শম্পা কে নাহারের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশনেন ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল মান্নান, বিশিষ্ঠ নারী নেত্রী ও রাজনীতিবিদ নবুয়াত আর সিদ্দিকী, ফারহানা জসিম, নাসিমা আলম, বন গবেষনা ইনস্টিট্উিট এর অধ্যাপক এবিএম হুমায়ুন কবির, উত্তর জেলা কৃষক লীগের দপ্তর সম্পাদক সেলিম সাজ্জাদ, বাংলাদেশ ফ্রুজেন ফুডস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য মোঃ সেলিম জাহাঙ্গীর, জেলা সামাজিক উদ্যোক্তা পরিষদের যুগ্ন সম্পাদক মোঃ জানে আলম, চান্দগাও পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতি ইসমাইল ফারুকী, প্রাইম ক্যাডেট স্কুলের পরিচালক আবু ইউনুচ, বাকলিয়া পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মনিরুজ্জমান, প্রজন্ম চট্টগ্রামের চৌধুরী জসিমুল হক, উন্নয়ন কর্মী আয়েশা বেগম মাধবী প্রমুখ।
সংলাপে বিভিন্ন বক্তাগন নারীর মানবাধিকার সুরক্ষায় সরকারী নানা উদ্যোগগুলির কার্যকর সুফল নিশ্চিতে স্থানীয় জনগোষ্ঠির সক্রিয় অংশগ্রহনের উপর গুরুত্বআরোপ করেন। অপরাধী ও সন্ত্রাসীরা সংঘবদ্ধ হলেও সমাজের ভালো মানুষগুলি সংঘবদ্ধ নয়। আর অপরাধীদের সব সময় প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক পৃষ্টপোষকতা দেয়ার কারনে এসময় তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেন। তাই তৃণমূলে সকল স্তরের মানুষের ঐক্য ও নেটওয়াকিং ছাড়া সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগগুলির সফল কার্যকারিতা নিশ্চিত সম্ভব নয়। এছাড়াও চট্টগ্রামে বিভিন্ন সময়ে যৌতুকের নামে নানা উপটৌাকন দাবি ও বিয়েতে বরযাত্রী খাওয়ানোর বিশাল আয়োজন বন্ধ, দেনমোহরে স্বর্ণের দাম প্রচলিত দামের সাথে সমন্বয় করা, গণপরিবহনে নারীদের জন্য কমপক্ষে এক চতুর্থাংশ সীট সংরক্ষন, তরুন জনগোষ্ঠিকে প্রজনন স্বাস্থ্য সেবার আওতায় আনা, তাদের জন্য ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বাড়ানোর দাবি জানানো হয়।