বিশেষ প্রতিবেদক :
চলতি মাসের ০৫ তারিখে মোটরসাইকেল যোগে মহলছড়ি হতে রাঙ্গামাটি যাওয়ার পথে বগাছড়ি এলাকায় ব্যাগসহ অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাগজপত্র হারিয়ে ফেলেন একটি বেসরাকরী এনজিও কর্মকর্তা মেহেদী হাসান। তিনি নিয়ম অনুযায়ী নানিয়ারচর থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
থানার কর্মকর্তাদের ব্যবহার ও সেবার বিষয়ে জানতে চাইলে মেহেদী হাসান বলেন, ‘ব্যাগসহ অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাগজপত্র’ হারিয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। নানিয়ারচর থানায় গিয়ে বলি, আমি জিডি করতে চাই। থানার অফিসার ইনচার্জ খুব আন্তরিকভাবে আমার কথা শোনেন। তিনি একটি হারানো ডায়েরি করার ফরম আমাকে দেন, আমি তা পূরণ করে দিলে একজন পুলিশ কর্মকর্তা দ্রুত সময়ের মধ্যে জিডি লিখে দেন। এমনকি ওই সময় সেখানে লোক না থাকার কারণে আমাকে চা খাওয়াতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেন ওই অফিসার ইনচার্জ।
বিষয়টি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে।’ এমন ইতিবাচক অভিজ্ঞতার কথা এখন পুলিশের রাঙ্গামাটি জেলার আওতাধীন নানিয়ারচর থানা এলাকার মানুষের কাছ থেকে শোনা যাচ্ছে। যারা সেবার জন্য নানিয়ারচর থানা-পুলিশের দারস্থ হয়েছিলেন তারা কাঙ্ক্ষিত সেবা পেয়েছেন।
সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হোক বা মামলা, টাকা না দিলে কাজ হয় না। তদন্ত কর্মকর্তাকে ঘুষ না দিলে এগোয় না তদন্ত। উপরন্তু অযাচিত নানা প্রশ্নবানে হতে হয় জেরবার। পুলিশ সম্পর্কে ভুক্তভোগীদের চিরাচরিত এমন মন্তব্য আমূল বদলে গেছে রাঙ্গামাটি জেলার আওতাধীন নানিয়ারচর এলাকায়।
পুলিশি সেবাকে জনবান্ধব, হয়রানি ও দুর্নীতিমুক্ত করার লক্ষ্যে রাঙ্গামাটি জেলার আওতাধীন নানিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ সাব্বির রহমান ‘কুইক রেসপন্স এন্ড বেস্ট প্র্যাকটিস’ নামে ব্যতিক্রমধর্মী পুলিশি সেবার এ উদ্যোগ সফলতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করছেন। বীরমুক্তিযোদ্ধা, প্রবাসী, পর্যটক, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী, নারী ও শিশুদের দ্রুততার সাথে আইনি সেবা দেওয়ার জন্য থানা খোলা হয়েছে আলাদা আলাদা হেল্প ডেস্ক। যার সুফল পাচ্ছেন সেবাপ্রত্যাশী মানুষ।
ব্যতিক্রমধর্মী এই উদ্যোগের বিষয়ে নানিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ সাব্বির রহমান বলেন, সুন্দর আচারণ ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে আইনগত সেবা প্রদানে নানিয়ারচর থানা বদ্ধপরিকর।
অন্যায়ের সাথে কোন আপোষ হবে না। নানিয়ারচর থানা পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশ সুপার মহোদয়ের নিদের্শনা মোতাবেক। সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে থানার পুলিশ সদস্যরা কেমন ব্যবহার করছেন এখন আমরা সেই বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি।
খারাপ ব্যবহারের অভিযোগ পেলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কোনো সেবাগ্রহীতা থানায় এলে তাকে সালাম দিয়ে তার সমস্যা জানতে চাইতে হয়। তাকে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সেবা দিতে হবে এমন নিদের্শ আমি থানায় যোগদানের পর হতে অফিসার ফোর্সদের বারংবার দিয়ে আসছি।
জিডি বা মামলা দায়ের হওয়ার পর গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ ডায়েরি, মামলা, পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার বা হয়রানীর বিষয় তদরকি করা হয়।
তিনি আরো বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে একটি গুরুতর অভিযোগ আছে জিডি কিংবা মামলা করতে, পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সেবা পেতে টাকা দিতে হয়। আমি আমার থানায় এটা বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছি। ‘মুজিববর্ষে আমাদের অঙ্গিকার হচ্ছে, পুলিশ হবে জনতার। তারই অংশ হিসেবে আমরা কাজ করছি। জনবান্ধব পুলিশিং শুরু করেছি। পুলিশ জনগণের বন্ধু, আমরা এই বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত করতে কাজ করছি। থানায় সেবা নিতে এসে মানুষ যে ভোগান্তিতে পড়ে, আমরা তা বন্ধ করতে চাই। মানুষ ইতোমধ্যে এর সুফল পাচ্ছে।’ সেবাপ্রত্যাশী পাহাড়ী ও বাঙ্গালী মানুষ এখন পুলিশের কাছে আসতে ভয় পায় না।
এটাই আমাদের অর্জন। মানুষ পুলিশকে ভয় পাবে না; বরং বন্ধু ভাববে। যে কোনো সমস্যায় পুলিশের সঙ্গে অবলীলায় যোগাযোগ করবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা। আমি কে কয়দিন এখানে চাকুরীতে থাকবো শতভাগ মানুষকে হায়রানীমুক্ত সেবা প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নানিয়ারচর উপজেলার সাধারণ নাগরিকরা বলেন দেশের প্রতিটি থানার ওসি যদি নানিয়ারচর থানার ওসি সাব্বির রহমানের মতো সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে তাহলে মাদক, চোরাচালান, ঘুষ, দুর্নীতি ও সন্ত্রাস মুক্ত এই দেশ হতো বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ।
তিনি কাজ করে যাচ্ছে দায়িত্ববোধের সাথে, যা মানুষকে ভালোবাসার এক অন্যরকম বহিঃপ্রকাশ এবং দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে এই থানার বর্তমান ওসির ভূমিকা অপরিসীম হয়ে থাকবে । এজন্য তিনি ‘সাদা মনের’ পুলিশ হিসেবে ইতোমধ্যে নানিয়ারচর উপজেলার সবার কাছে পেয়েছে গ্রহণযোগ্যতা।