বান্দরবান প্রতিনিধিঃ
বান্দরবানের চিম্বুক এলাকার যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসা ম্রো সম্প্রদায় অধিবাসীদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ করে চিম্বুক পাহাড়ের কাপ্রু পাড়া এলাকায় পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণের প্রতিবাদে সকালে চিম্বুক থেকে বান্দরবান শহর পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার লং মার্চ বের করেন ম্রো সম্প্রদায়।
রবিবার(০৭.০২.২০২১) তারিখ সকাল ৯টা নাগাদ ম্রো সম্প্রদায়ের সহস্রাধিক নারী-পুরুষ ব্যানার, ফেষ্টুনও পোষ্টার হাতে চিম্বুক থেকে বান্দরবান শহরের দিকে লং মার্চে বের হয়। পরে বাধা বিপত্তি পেরিয়ে বান্দরবান রাজার মাঠে অবস্থান করে প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়।
আন্দোলন আয়োজকদের একজন ইয়াঙন ম্রো জানান,বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ে পাঁচ তারকা হোটেল ও বিনোদন পার্ক নির্মাণের প্রতিবাদে বের করা লং মার্চটি বেলা ১১টার দিকে সড়কের বেথেনি পাড়া ছয় মাইল এলাকায় এসে পৌঁছালে
আন্দোলনকারীরা পুলিশের বাঁধার মুখে পড়ে ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। তিনি আরো জানান, শহরের কিছু দূরে ব্যারিকেড দিয়ে লং মার্চে বাধা দেয়া হয়। শহরে তাদের প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছিল না।
প্রতিবাদ সমাবেশে বাংলাদেশ ম্রো ভাষা সংরক্ষন ও উন্নয়ন কমিটির সভাপতি সিংপাত ম্রো স্বাগত বক্তব্যে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, চিম্বুকের নাইতং পাহাড়ে ম্রো ভূমি বেদখল করে বিনোদন কেন্দ্র ও পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণের জন্য এই ভূমির এক টুকরো পরিমানও আমরা ছাড় দেবো না। এছাড়া পাহাড়ে হোটেল ও বিনেদন কেন্দ্র স্থাপন বাতিল, অবৈধভাবে ভূমি দখলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের হুমকি ধামকি প্রদান বন্ধ করা, চিম্বুকের ম্রোদের যুগ যুগ ধরে ভোগদখলীয় ভূমিতে পর্যটনবা বিনোদন কেন্দ্র স্থাপনকরন থেকে বিরত থাকা, চিম্বুক পাহাড়ের ভূমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্থানীয় কারবারী, হেডম্যান, জনপ্রতিনিধি ছাড়াও এলাকার পাড়াবাসীদের নিয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণে সুযোগ দিতে হবে।
আন্দোলন আয়োজকের সভাপতি রেংইয়ং ম্রো প্রতিবাদী কন্ঠে বলেন, আমরা কালচারাল শো ডাউনের মাধ্যমে সরকার ও সচেতন মহলের কাছে বোঝাতে চেয়েছিলাম, কিভাবে আমরা নিরীহ ভাবে মাটির সাথে মিশে আছি, মিশে থাকছি। যা খুবই কষ্ট ও বেদনাদায়ক। আমাদের মতো জুম চাষ করে খেটে খাওয়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ম্রোদের।
এ ছাড়া আরো বলেন, পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র স্থাপনের কাজ চলমান থাকলে আমাদের প্রতিবাদ কর্মসূচি, বিক্ষোভও চলমান থাকবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাঙামাটি নিউজ ২৪.কম বান্দরবান প্রতিনিধিকে বান্দরবান সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৌসিফ আহমেদ জানান, আসন্ন বান্দরবান পৌরসভার নির্বাচনকে ঘিরে এমনিতেই তৎপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন। নির্বাচনি এলাকায় বিশৃঙ্খলা এড়াতে আন্দোলনকারীদের শহরে প্রবেশে নিষেধ করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ের কাপ্রু পাড়ার কাছে চন্দ্র পাহাড় নামক স্থানে সিকদার গ্রুপ একটি পাঁচ তারকা মানের রিসোর্ট তৈরি করছে। ম্রো জনগোষ্ঠীর লোকজন অভিযোগ করে বলেছেন, তাদের ভোগ-দখলীয় জায়গা জমি দখল করে এটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এরই প্রতিবাদে অনেক দিন ধরেই আন্দোলন করে আসছেন বান্দরবানের ম্রো সম্প্রদায় ও বিভিন্ন সংগঠন।