নিজস্ব প্রতিনিধি :
রাঙামাটি ২৯৯ নম্বর আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দীপংকর তালুকদার তার ২১ দফা প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। আর ২১ দফার মধ্য দিয়ে পর্যটন শহর রাঙামাটিকে ‘স্মার্ট রাঙামাটি’ গড়ে তোলার প্রত্যয় জানান তিনি।
দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এই ইশতেহার ঘোষণা করেন দীপংকর তালুকদার। এ সময় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী এবং কো-চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুছা মাতব্বর, পৌরমেয়র আকবর হোসেন চৌধুরীসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
দীপংকরের এই একুশ দফায় পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, রাঙামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলাকে বিশ্বমানের পরিবেশবান্ধব পর্যটন (ইকো ট্যুরিজম) অঞ্চল গঠন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন।
এ ছাড়া ইশতেহারে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম থেকে রাঙামাটি পর্যন্ত রেলপথ এবং রাঙামাটিতে একটি বিমানবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। রাঙামাটিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন এবং পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মিজোরামসহ পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে রাঙামাটির বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য বরকল উপজেলার ঠেগামুখে স্থলবন্দর স্থাপন করে ইমিগ্রেশন পয়েন্ট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।
ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে কাপ্তাই হ্রদের গভীরতা বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ এবং হ্রদের দূষণ রোধেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। হ্রদে মিঠা পানির মাছের চাষ বাড়াতে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। যেসব দুর্গম এলাকায় বৈদ্যুতিক লাইন নেওয়া সম্ভব নয়, সেখানে সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। যেসব এলাকা মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কের আওতায় আসেনি, সেসব এলাকাসহ পুরো রাঙামাটি জেলাকে শক্তিশালী নেটওয়ার্কের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। কৃষিজ এবং পতিত সব জমি চাষাবাদের আওতায় আনা হবে। জনগোষ্ঠী বসবাসকারী সংরক্ষিত বনাঞ্চলকে ডিরিজার্ভ ঘোষণা করে পার্শ্ববর্তী মৌজায় অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন দীপংকর তালুকদার।
আসনটিতে ১৯৯১ সাল থেকে একটানা আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে সপ্তমবারের মতো নির্বাচন করছেন বর্তমান এমপি দীপংকর তালুকদার। এর মধ্যে দুবার পরাজিত হলেও জয়ী হয়েছেন চারবার। এক মেয়াদে ছিলেন প্রতিমন্ত্রীও। শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় এবারের নির্বাচনি মাঠে ‘নিশ্চিন্তে’ বিজয়ী আবহে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন দীপংকর। তবে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আছেন দুই প্রার্থী, সাংস্কৃতিক ঐক্য জোটের প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা অমর কুমার দে এবং তৃণমূল বিএনপির মিজানুর রহমান।
দীপংকরের এই একুশ দফার প্রথম দফায় স্থান পেয়েছে পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন। এতে বলা হয়েছে, গত ২৬ বছরে চুক্তির অধিকাংশ বাস্তবায়ন হলেও মৌলিক বিষয়গুলোর মধ্যে কয়েকটা ধারা এখনো অবাস্তবায়িত রয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরকারী উভয় পক্ষের সদিচ্ছার ঐক্য ও সমন্বয় ঘটিয়ে ন্যূনতম সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বলা হয়েছে, শান্তিচুক্তির পর স্থানীয় কিছু সন্ত্রাসীগোষ্ঠী অবৈধ অস্ত্রের সাহায্যে রাঙামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে তাদের হাতে সাধারণ জনগণ এবং রাঙামাটি জেলায় আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী হতাহত হয়েছেন। তবে এখন নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতায় তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম সংকুচিত হয়েছে। এলাকায় শান্তি ও উন্নয়নের স্বার্থে সব ধরনের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম থেকে রাঙামাটি পর্যন্ত রেলপথ এবং রাঙামাটিতে একটি বিমানবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। রাউজান থেকে রাঙামাটি শহরের প্রবেশমুখ পর্যন্ত চার লেনের রাস্তা নির্মাণের জন্য জোরালো উদ্যোগ নেওয়া হবে। রাঙামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলাকে বিশ্বমানের পরিবেশবান্ধব পর্যটন (ইকো ট্যুরিজম) অঞ্চল গঠন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
আরও আছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শিক্ষার কথা। বলা হয়েছে, কতিপয় জাতীয় ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল হীন উদ্দেশ্যে সাম্প্রদায়িক কার্যকলাপ ও উসকানির মাধ্যমে সম্প্রীতি নষ্ট করার অপচেষ্টা করে থাকে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এ ছাড়া রাঙামাটিতে একটি কৃষি কলেজ স্থাপন ও শিক্ষাবঞ্চিত এলাকায় আবাসিক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হবে। দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য রাঙামাটিতে একটি কারিগরি শিক্ষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মিজোরামসহ পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে রাঙামাটির বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য বরকল উপজেলার ঠেগামুখে স্থলবন্দর স্থাপন করে ইমিগ্রেশন পয়েন্ট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে রাঙামাটির এক সুবিধাজনক জায়গায় অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলার সুবিধার্থে সে দেশের ভাষা আয়ত্ত করতে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
দশম ও ১১তম দফায় স্থাপন পেয়েছে রাঙামাটির শহরের বাইরে জেলা কারাগার ও খাদ্যগুদাম স্থানান্তর এবং রাঙামাটি জেলাধীন ১০ উপজেলার আন্তউপজেলা সড়ক সংযোগব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।
ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে কাপ্তাই হ্রদের গভীরতা বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ এবং হ্রদের দূষণ রোধ করতেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। হ্রদে মিঠা পানির মাছের চাষ বাড়াতে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।
সদর উপজেলাসহ প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে হিমাগার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণে সক্ষম অবশিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনতিবিলম্বে এমপিও এবং জাতীয়করণের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
১৬ ও ১৭তম দফায় স্থান পেয়েছে বিদ্যুৎ ও মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক। যেসব দুর্গম এলাকায় লাইন নেওয়া সম্ভব নয়, সেখানে সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। যেসব এলাকা মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কের আওতায় আসেনি, সেসব এলাকা শক্তিশালী নেটওয়ার্কের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
১৮ ও ১৯ নম্বর দফায় রয়েছে, বনজ ও ফলদ বাগান ও ক্রীড়া। কৃষিজ এবং পতিত সব জমি চাষাবাদের আওতায় আনা হবে। জনগোষ্ঠী বসবাসকারী সংরক্ষিত বনাঞ্চলকে ডিরিজার্ভ ঘোষণা পূর্বক পার্শ্ববর্তী মৌজায় অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এবং ক্রীড়া উন্নয়নের জন্য প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে স্টেডিয়াম নির্মাণ এবং উপজেলা সদরে একটি গল্ফ মাঠ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
২০ ও শেষ দফায় রয়েছে, স্বাস্থ্যসেবা ও সিসি ক্যামেরা। স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত এলাকায় প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং নিরাপদ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নিরাপত্তার স্বার্থে রাঙামাটি শহরসহ জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে।