রিপন ওঝা,মহালছড়ি
খাগড়াছড়ির মহালছড়ির সদর ইউনিয়নের দূরপয্যনাল গ্রামে জ্ঞানোদয় বনবিহারে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশনার মধ্যে দিয়ে নানা আনুষ্ঠানিকতায় ২১তম দানোত্তম কঠিন চীবর দান-২০২৩ উদযাপিত হয়েছে।
এ মহতী অনুষ্ঠানে ২১তম কঠিন চীবর দানীয় অনুষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদ-২০২৩ মহালছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিপুল বিকাশ খীসা সভাপতিত্ব করেন।
আজ ১লা নভেম্বরর জ্ঞানোদয় বনবিহারে এলাকায় বসবাসরত ও দূর দূরান্ত হতে আগত দায়ক দায়িকাদের আয়োজনে শুরু হয়েছে ২দিন (৩১অক্টোবর ও ১লা নভেম্বর)দিনব্যাপী কঠিন চীবর দান উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
কঠিন চীবর দান উপলক্ষে বনবিহারে বুদ্ধ পূজা, পঞ্চশীল গ্রহণ, সংঘদান, অষ্ট পরিষ্কার দান, পানীয় দান, কল্পতরু দানসহ সকল দানীয় বস্তু দান করেন। এসময় ধর্মীয় গুরুরা পুন্যার্থীর উদ্দেশে ধর্ম দেশনা প্রদান করেন। দায়ক দায়িকারা এসময় যে যার সাধ্যমতো প্রদীপ প্রজ্বলন, ফুল-ফল, ছোয়াইং(খাবার) প্রদান করে বৌদ্ধসহ ভান্তিদের তা দান করে। সন্ধ্যায় ভগবান বৌদ্ধের উদ্দেশ্যে আকাশে আকাশ প্রদীপ(ফানুস বাতি) উড়িয়ে দেওয়া হবে।
প্রধান অতিথি হিসেবে কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্ণেল শাহরিয়ার সাফকাত ভূইয়া, পিএসসি, মহালছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রতন কুমার শীল ও স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
এসময়ে পরমপূজনীয় শ্রদ্ধেয় বনভান্তের অনুসারী রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারের ভান্তে অধ্যক্ষ শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির, জ্ঞানোদয় বনবিহারের অধ্যক্ষ সুমঙ্গল মহাস্থবির এবং মুবাছড়ি বনবিহার সহ বিভিন্ন বিহার হতে আগত ভিক্ষুগণ উপস্থিত সকল পূর্ণ্যার্থীদের থেকে ধর্মদেশনা দিয়েছেন।
উক্ত এ দানোত্তম কঠিন উপলক্ষে দূর দূরান্ত থেকে পুণ্য সঞ্চয়ী করার জন্য হাজার হাজার পুণ্যার্থীরা বিহারের মাঠপ্রাঙ্গনে সমবেত হয়ে ধর্মদেশনা শ্রবণ করেন।
উল্লেখ্যে যে, ভারতীয় জনপদে ‘কঠিন চীবর দান’ শব্দটি গৌতম বুদ্ধের সময় থেকে প্রচলিত হয়ে আসছে। ত্রি-চীবর হলো চার খণ্ডের পরিধেয় বস্ত্র, যাতে রয়েছে দোয়াজিক, অন্তর্বাস, চীবর ও কটিবন্ধনী। মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তুলা কেটে, সুতা বানিয়ে, রং করে, নানা রকম আচার ও নিয়ম মেনে একেকটি চীবর তৈরি করার কাজটি খুব বেশি কঠিন বলেই অনুষ্ঠানের এই নাম। পূণ্যের আশায় প্রতি বছর এভাবে চীবরসহ ভিক্ষুদের অন্যান্য আনুষঙ্গিক সামগ্রীও দান করে থাকেন।
মহালছড়িতে আজ ১লা নভেম্বর বুধবার সেনাজোন জোন কমান্ডার লে: কর্ণেল শাহরিয়ার সাফকাত ভূইয়া, পিএসসি দূরপুয্যানাল জ্ঞানোদয় বন বিহারে দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান পরিদর্শন, শুভেচ্ছা বিনিময় এবং আর্থিক অনুদান প্রদান করেন।
উপস্থিত এলাকাবাসীর পূর্ণ্যার্থীদের উদ্দেশ্যে জোন কমান্ডার বলেন,প্রত্যেক জাতির ধর্মের অনুশাসনই পারে অসাম্প্রদায়িক দেশ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে।তাই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মহালছড়ি জোনের লক্ষ্য একটাই তা হলো শান্তি, সম্প্রীতি, সৌজন্যবোধ, সহমর্মিতা,একনিষ্ট আনুগত্য এবং উন্নয়নের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক মহালছড়ি গড়ে তোলা। জোন কমান্ডার সকলকে জাতি, গোষ্ঠী, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সম্প্রীতির সৌহার্দ্যপূর্ণ মহালছড়ি গড়ে তোলার জন্য আহবান জানান।
জ্ঞানোদয় বন বিহার এর পরিচালনা কমিটি এবং স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ জোন কমান্ডারকে অতিথি হিসেবে পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত হন ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।