আলীকদম প্রতিনিধি:
বান্দরবানের আলীকদম উপজেলা শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারী কাম হিসাব রক্ষকের লাগামহীন দূর্নীতি ও শত অভিযোগের পরও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না কতৃপক্ষের। তাকে ঘুষ না দিলে বদলী,বেতন, বিল, পিআরএল,পেনশন সবকিছু আটকে যায় এক নিমিষে। উপজেলা শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারী কাম হিসাব রক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও নিরব দর্শকের ভূমিকায় সংশ্লিষ্ট উপরস্থ কর্মকর্তারা।
পার্বত্য জেলার বাসিন্দা না হওয়া স্বত্বেও অনিয়মের মাধ্যমে তার স্ত্রী,ভাই, বোন,মামাতো ভাই ও ভাগ্নেকে চাকরী দিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসকে বানিয়েছেন বংশ পরাম্ভনায় পারিবারিক অফিস।
প্রায় একযুগ ধরে বদলি,ডেপুটেশন,পি আর এল ও পেনশন,নিয়োগ বাণিজ্য,মেরামতসহ সকল কাজের কমিশন নিয়ে আসছেন এই উচ্চমান সহকারী নাছির উদ্দীন। উপজেলার শিক্ষক মহলে দূর্নীতি বাজ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত নাছির উদ্দিন তবুও বহাল তবিয়তে এই কর্মচারী। এরমধ্যে শিক্ষকরা তার বিরুদ্ধে অভিযোগের ৩ মাস পেরিয়ে গেলেও নেওয়া হয়নি ব্যবস্থা।
তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, হুমকী-ধমকী, সাম্প্রদায়িক উস্কানীমূলক কথাবার্তা এবং দুর্নীতি-অনিয়ম ডুবে আছেন।দীর্ঘদিন ধরে ইউডিএ নাছিরের অত্যাচারে প্রধান শিক্ষক থেকে সহকারি শিক্ষক সকলেই অতীষ্ট।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১১ সালে ইউএনডিপির অর্থায়নে আলীকদমের দুর্গম এলাকায় ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ করে ছিল। এসব বিদ্যালয় ২০১৫ সালে জাতীয়করণের পরিকল্পনার উদ্যোগ নেয় পার্বত্য জেলা পরিষদ। উপজেলা শিক্ষা অফিসের কর্মচারী হিসেবে শিক্ষক তালিকা করার সময় ক্ষমতার অপব্যবহার ও তথ্য গোপন করে অভিযুক্ত ইউডিএ মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন ‘রাইতুমনি পাড়া সপ্রাবি’তে তার স্ত্রী রিয়াজুল জান্নাত ও তার আপন ভাই মোঃ আব্বাস উদ্দিনকে, ‘পারাও পাড়া সপ্রাবি’তে তার আপন বোন মোতাহারা বেগম কে, মেনক্য মেনকক পাড়া সপ্রাবি’তে তার মামাতো ভাই আরিফ উল্যাহকে, ‘বিদ্যামনি পাড়া সপ্রাবি’তে তার ভাগ্নে মোজাম্মেল হককে শিক্ষক হিসেবে তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করে নেন। গত ১৩ এপ্রিল ২০২২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত শিক্ষক গেজেটে তারা চূড়ান্ত ভাবে নিয়োগ লাভ করেন।
একই কায়দায় জ্যোতি বড়ুয়া,উম্মে রুমান রুমি ও লিপিকা শর্মা নামের আরো তিন জন শিক্ষককে মোটা অংকের অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে ওই তালিকায় অন্তর্ভূক্ত দেখিয়ে নিয়োগে সহায়তা করেন ইউডিএ নাছির উদ্দীন। তারা কেউ ২০১১ সালে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালগ্নের শিক্ষক নন। এসএমসি দ্বারা তারা নিয়োগপ্রাপ্তও নন, তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের বাসিন্দাও নন।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, এসব শিক্ষকরা স্কুল প্রতিষ্ঠার পর থেকে স্কুল জাতীয়করণ এবং শিক্ষক গেজেটের সময়কাল থেকে ২০২২ সালের ১৩ নভেম্বও পর্যন্ত ১১ বছর ১০ মাস ১৯ দিন ধরে একদিনের জন্য সেইসব বিদ্যালয়ে হাজির ছিলেন না। শিক্ষক হাজিরা খাতায় তাদের নামও নেই। গত জুন মাস থেকে বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা অফিসে প্রদত্ত এম.আর ফরমেও এসব শিক্ষকদের নাম নেই।
উপজেলার ইউএনডিপির ২০ টি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জাতীয়করণ করার জন্য খসড়া গেজেট প্রকাশের পর মন্ত্রাণালয়ে চূড়ান্ত গেজেটের জন্য টাকা দিতে হবে বলে ৯ লক্ষ টাকা নেন ইউএনডিপির শিক্ষকদের কাছ থেকে উপজেলা শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক নাছির উদ্দিন, এমন অভিযোগ করেন জাতীয়করণ হওয়া শিক্ষক নিকসন পালসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক।
বিশ্বাইরুং ত্রিপুরা, মরিয়ম বেগম, ঞোচিংহ্লা মারমা বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়েছে তার জন্য অধিদপ্তরের টাকা পাঠাতে হবে। টাকা না দিলে চূড়ান্ত তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া হবে বলে আমাদের কাছ থেকে স্বাক্ষরিত চেকে টাকার অংষ্ক বসিয়ে নেন নাছির উদ্দিন।
তারা আরও বলেন, ভয়ে এবিষয়ে কাউকে অভিযোগ করতে পারিনি, কারণ অভিযোগ করলে আমাদের চাকরী চলে যাবে বলে জানান নাছির উদ্দীন।
মারা যাওয়া এক শিক্ষক পরিবারের কাছে টাকা দাবি করলে,পরিবারের এক সদস্য তা ফেইসবুকে পোস্ট করেন।
এক প্রধান শিক্ষক বলেন, দূর্যোগকালীন স্কুলের জন্য ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা আসলেও উক্ত বিদ্যালয়ে না দিয়ে ভুয়া বিলের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে দেন। তাছাড়া তার যোগদানের পর থেকে এই পর্যন্ত যতগুলো বিদ্যালয় সংস্কার কাজের বরাদ্দের টাকা থেকে তার নির্ধারণ করা কমিশন দিতে হয়েছে। না দিলে চরম হয়রানি ও বিল আটকে রাখা হয়।
চৈক্ষ্যং মৈত্রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুর মোহাম্মদ বলেন, এই নাছির উদ্দিনের দূর্নীতির লাগামহীন। টাকা না দিলে কাজ হয় না। পুরো অফিসটার যেন অদৃশ্য নিয়ন্ত্রক এই কর্মচারী। আমি টাকা না দেওয়ায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে প্রকাশ্যে খারাপ আচরণ ও লাঞ্ছিত করেছেন অনেক বার আমাকে।
উপজেলার চম্পট পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়াউল হক বলেন, আলীকদমে ৫০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পক্ষে আমরা ৫৭জন প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষক উপজেলা শিক্ষা অফিসের ইউডিএ নাছিরের বিরুদ্ধের অনিয়মের ও লাগাম একটি অভিযোগ দায়ের করি। অভিযোগের কপি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালকের, নিকট পাঠাই কিন্তু অভিযোগের সাড়ে তিনমাস পার হলেও ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃকপক্ষ।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের উচ্চমান অফিস সহকারী কাম হিসাব রক্ষক নাছির উদ্দিন বলেন, তদন্ত হয়েছে, তদন্ত রিপোর্টে কি আসে দেখেন।
আপনি ঘুষ বানিজ্য ও আপনার ক্ষমতা অপব্যবহার করে আপনার আত্মীয়দের চাকরী দিয়েছেন কিভাবে এমন প্রশ্নে উত্তর না দিয়ে মুঠোফোনে কল কেটে দেন। পরে কল দিলেও আর কল ধরেন নি।
সাবেক উপজেলা শিক্ষা অফিসার মুসাব্বির হোসেন খান বলেন, আমি থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে অনেক শিক্ষক অনিয়মের অভিযোগ করেছিল। তিনি আরও বলেন, নাছিরের স্ত্রী ও বোন বিদ্যালয়ে না যাওয়ায় তাদের বেতন বন্ধ রাখা হয়েছিল।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য দুংড়িমং মার্মা বলেন, নাছিরের অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেছে। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের গত মিটিংয়ে অভিযুক্ত ইউডিএ নাছিরের বিরুদ্ধে আলোচনা হয়েছে। এ সময় তাকে উপজেলা থেকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তও হয়েছে। তবে এখনো কেন তাকে সরিয়ে নেয়া হয়নি সে ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ শফিউল আলম বলেন, নাছির উদ্দিনকে খুব তাড়াতাড়ি বদলি করা হবে ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তার অনিয়মের বিষয়ে আগে কেউ অভিযোগ করেনি করলে আরও আগে ব্যবস্থা নেওয়া হত।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত জানান, অনিয়ম ও দূর্নীতির বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে, বিষয়টি দেখবো।
আলীকদমে শিক্ষা অফিসের ইউডিএ নাছিরের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির পাহাড় সমান অভিযোগ।
Leave a comment
Leave a comment