রোয়াংছড়ি প্রতিনিধিঃ
বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে স্থানীয় প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) অফিসের কার্য সহকারি ও হিসাব রক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) নাছির উদ্দিনের একজন সরকারী কর্মচারী হয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঠিকাদারি কাজে নিজেই নিয়োজিত রয়েছে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রক্ষক হয়ে যখন ভক্ষকের কাজ করে সাধারণ মানুষের অবস্থা কি হবে এখানে জনমনে প্রশ্নবিদ্ধ।
অভিযোগ উঠেছে, অফিসের পুরনো কর্মচারী হওয়ায় প্রভাব দেখিয়ে নানা অনিয়মে কাজ হাসিল করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তিনি।
এ নাছির উদ্দিনের কারিশমার কারণে ২০২১-২০২২ইং অর্থসালে বিশেষ বরাদ্দ উপজেলা পরিষদ ভবন মেরামত প্রকল্পের আওতায় উপজেলা পরিষদ ভবন-১ ও ২, দুইটি কাজ মিলে ৫লক্ষ করে ১০লক্ষ টাকা এবং উপজেলা পরিষদ গেজেটেড কোয়াটার ও নন-গেজেটেড কোয়াটার মিলে ৬লক্ষ টাকা করে দুইটিতে ১২লক্ষ টাকা ব্যয়ে মেরামত কাজে ৪টি প্যাকেজে প্রাক্কলিত মূল্যের মোট ২২লক্ষ টাকা। মেরামত কাজের বিজ্ঞপ্তি, টেন্ডার ও কোন নোটিশ ব্যতীত নামে মাত্র রেজুলেশন দেখিয়ে প্রকৃত ঠিকাদারকে না দিয়ে কার্য সহকারি মোঃ নাছির উদ্দিন দ্যা মামনি কনস্ট্রাক্টশন লাইসেন্সের মাধ্যমে ঠিকাদারি কাজটি ভাগিয়ে নিয়েছে বলে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে সূত্রে জানা গেছে, নাছির উদ্দিনের বেপরোয়া দুর্নীতির কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে স্থানীয় ও পেশাদার ঠিকাদারদের।
২০২১-২০২২ অর্থ সালে গৃহীত কর্মসূচী উপজেলা পরিষদ ভবন মেরামতের কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির পন্থা অবলম্বন করে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেওয়া অভিযোগ নাছির উদ্দিনের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, তিনি একজন সরকারি কর্মচারী হয়ে ঠিকাদারি কাজে জড়িত রয়েছেন।
তিনি একজন অফিসের কর্মচারী হওয়ায় অফিসের কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে স্ব-কৌশলে টেন্ডার পরিবর্তে কোটেশন (আর.এফ.কিউ) দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। এদিকে হারাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব। নাছির উদ্দিন রোয়াংছড়ি উপজেলা এলজিইডি অফিসের দীর্ঘদিন যাবত কর্মরত থাকায় সব কাজেই সেচ্ছাচারীতা করে চলছেন। ওই অফিসের কর্মকর্তা হিসেবে নির্বাহী প্রকৌশলী থাকলেও অফিস কার্যক্রম চলে নাছির উদ্দিনের নিয়ন্ত্রণে।
আরও জানা যায়, অফিসের সিনিয়র কর্মকর্তা থাকলেও নিজের পারসেন্টিস পেতে টেন্ডারের বিজ্ঞাপন, সিডিউল ক্রয়-বিক্রয়, টেন্ডার খোলার এবং ঠিকাদারি বিল পাস করার কাজের দিক নিদের্শনা নাছির উদ্দিনের কথায় মতোই চলে। প্রভাব খাটিয়ে ওই অফিসের নাছির উদ্দিন একাই একশো। রোয়াংছড়ি উপজেলা থেকে কার্য সহকারি নাছির উদ্দিনের অপসারণ চাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারীগণ। অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ পেশাদার ঠিকাদারগণ নাছির উদ্দিনের কাছে জিম্মি।
পেশাগত ঠিকাদারদের সূত্রে জানা যায়, সিডিউল অনুযায়ি কাজ করে বিল নিতে গেলে নাছির উদ্দিনের পকেটে আগে দিতে হয়। তা না হলে কমিটমেন্ট দিতে হবে। নাছির উদ্দিনের কথা এড়িয়ে গেলে বিলের কাগজগুলো অন্যত্র সরিয়ে রাখেন। কিছু অংশের ভাগ কেটে নেয়ার কারণে এলজিইডি কর্তৃক প্রচুর আনাচে-কানাচে কার্যাদেশ পেলেও তেমন করে কাজগুলি টেকসই হচ্ছে না। ঘুষের টাকা ছাড়া কাজ শুরু করতে পারে না। যার ফলে অনিচ্ছাকৃতভাবে বাধ্য হয়ে কিছু অনিয়মে কাজ করতে হচ্ছে।
দ্য মামনি লাইসেন্সের স্বত্বাধিকারী ও প্রকৃত মালিক ওয়াংনুচিং মারমা সাথে ফোন যোগাযোগ করে না পাওয়ায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে লাইসেন্সের মালিকে (ওয়াংনুচিং মারমা) স্বামী অংশৈমং মারমা সাথে ফোনে যোগযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের লাইসেন্স তো মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। প্রায় ৩-৪ বছর যাবত করা হয়নি। তবে সেই লাইসেন্সটি এলজিইডি অফিসের কার্য সহকারি নাছির উদ্দিন নিয়ে গেছে। এব্যাপারে বিস্তারিত নাছির উদ্দিন বলতে পারবে।
এ ব্যাপারে ভাইস চেয়ারম্যান আথুইমং মারমা নিশ্চিত করে বলেন, বর্তমানে উপজেলা পরিষদ ভবন-২, টাইলস বসানো কাজের চলমান কাজটি নাছির উদ্দিনের কাজ। সেই কাজটি নাছির উদ্দিন থেকে ৩০হাজার টাকা দিয়ে কিনেছি। তিনি আরো বলেন, আমার নিজেরও একটি কাজ পেয়েছি। সে কাজটিও করছে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আথুইমং মারমা।
এলজিইডি অফিসে কার্য সহকারি নাছির উদ্দিনের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি এবিষয়ে কথা বলতেই অপরাগত প্রকাশ করেন। এছাড়া প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি দেখাতে পারেননি।
রোয়াংছড়ি উপজেলা অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) বান্দরবান জেলা অফিসের সিনিয়র প্রকৌশলী মো. জামাল উদ্দিন বলেন, সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী হয়ে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে সরাসরি অংশ গ্রহণ, শেয়ারদার এবং ঠিকাদারি কাজ করতে পারবেন না। নাছির উদ্দিন একজন এলজিইডি অফিসের কর্মচারী হয়ে কাজ করে থাকলে তাকে মৌখিক ও লিখিত নোটিশ দেওয়া হবে এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হবে।