মোঃ সিরাজুল মনির, ব্যুরো প্রধান চট্টগ্রাম।
চট্টগ্রামের হাটহাজারী লাইনে সিএনজি চালক মোহাম্মদ নরুচ্চছফা, গত পাচ বছর ধরে অটোরিকশা চালাচ্ছে। তার লাইসেন্স থাকলেও নেই তার গাড়ির কোন কাগজপত্র। ফিটনেস, ট্যাক্স টোকেনের মেয়াদ শেষ হলে তা রিনিউ করতে চট্টগ্রাম বিআরটিএ অফিসে গেলে তার নামে ই টিন না থাকায় টাকা জমা দিতে পারেনি। কারণ হিসাবে নুরুচ্ছফা জানান গাড়ির মূল মালিক বিদেশে থাকায় এবং ই টিন না থাকায় টাকা জমা নেয়নি ব্যাংক। কয়েকদফায় তার গাড়ি বিক্রিই হওয়াতে এবং মালিকানা পরিবর্তন না করাতে তার এ বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে মাসিক হারে পুলিশকে টাকা দিয়ে সে গাড়ি চালাচ্ছে বিনা বাধায়। চট্টগ্রাম -কক্সবাজার মহাসড়ক,উত্তর চট্টগ্রামের সবকটি উপজেলা এবং চট্টগ্রাম মহানগরীর ভেতরের সড়কগুলোসহ ১৫ উপজেলায় ছোট-বড় সড়কগুলোতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অন্তত ৫৫ হাজার অনিবন্ধিত সিএনজি টেক্সি। নিবন্ধন না থাকার কারণে সরকার রাজস্ব হারালেও পুলিশসহ স্হানীয় শ্রমিক-মালিকদের অসংখ্য সংগঠনের বিরুদ্ধে মাসোহারা ও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। নিবন্ধন না থাকার কারণে গত ১০ বছরে এসব সিএনজি থেকে শত কোটি টাকার বেশি রাজস্ব হারিয়েছে সরকার।
জানা যায়, মহাসড়কে তিন চাকার এসব যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও পুরো চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে নিবন্ধিত অটোরিকশার পাশাপাশি দিনরাত বীরের বেশে সড়কে চলছে অনিবন্ধিত অটোরিকশাও। মহাসড়কের প্রত্যেকটি মোড়ে মোড়ে গড়ে উঠেছে অবৈধ এসব অটোরিকশার অবৈধ স্ট্যান্ডও। চট্টগ্রাম জেলার সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, সিএমপির বন্দর ট্রাফিকসহ স্হানীয় মালিক-শ্রমিকগুলোর অসংখ্য সংগঠন মাসোহারা ও দৈনিক নির্ধারিত চাঁদার মাধ্যমে এসব অনিবন্ধিত গাড়ি চালানার সুযোগ করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ।
সরেজমিনে দেখা যায় চট্টগ্রাম মহানগরী থেকে শাহ আমানত সেতু কিংবা নগরীর কালুরঘাট সেতু, নতুনপাড়া বিআরটিএ এলাকা পার হলেই মহাসড়কে দেখা মেলে অনিবন্ধিত অসংখ্য সিএনজিচালিত অটোরিকশার। নগর ট্রাফিকের আওতাধীন হলেও শাহ আমানত ব্রিজের দক্ষিণ প্রান্তে মইজ্যারটেক মোড়ে সবসময় কয়েকশত অটোরিকশার লাইন করে দাড়িয়ে দেখা যায়।
অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়, মইজ্যারটেক থেকে কর্ণফুলী থানার ব্রিজঘাট, বোর্ডবাজারসহ চরলক্ষ্যার বিভিন্ন ছোট ছোট সড়কে এসব অটোরিকশা চলাচল করে। আবার মইজ্যার টেক থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে বাঁশখালী, আনোয়ারা, পটিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া এবং কালুরঘাটের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে বোয়ালখালী, বেঙ্গুরা, মনসারটেক, পটিয়া পর্যন্ত কয়েক হাজার অটোরিকশা চলাচল করে, যার বেশিরভাগই অনিবন্ধিত।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের শান্তিরহাট মোড়ে কয়েকশত অটোরিকশা পুরো মহাসড়কের দুইদিক দখল করে রাখে প্রতিদিন। হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা সকাল থেকে রাতঅব্দি শান্তিরহাটে ডিউটি করলেও মহাসড়কে বরাবরই অনিবন্ধিত অটোরিকশার দাপট লক্ষ্য করা যায়। শান্তিরহাট থেকে আনোয়ারা, বুধপুরা বাজার, কাশিয়াইশ নয়াহাট, আশিয়া বাংলাবাজার পর্যন্ত এসব অটোকিশা যাতায়াত করে। আবার পিএবি (পটিয়া-আনোয়ারা-বাঁশখালী) সড়কের চাতুরী চৌমুহনীতে কয়েক হাজার অটোরিকশার অবস্থান। ওই স্পটে চারিদিকেই সিএনজি অটোরিকশার জঞ্জাল। আনোয়ারার বিভিন্ন সড়ক বাদেও চন্দনাইশের বরকল ও বাঁশখালী সড়কে যাতায়াত করে এসব গাড়ি। অপরদিকে চট্টগ্রাম রাঙ্গামাটি সড়কের মহানগর এলাকার নতুনপাড়া বিআরটি এ এলাকায় অবস্থান করে হাটহাজারী ফটিকছড়ি উপজেলায় চলাচলকারী অটোরিকশা গুলো অবস্থান করে।
তাছাড়া চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের আমজুর হাট, পটিয়া বাসস্ট্যান্ড আনোয়ারা রাস্তার মাথা, বৈলতলী রাস্তার মাথা, কমলমুন্সির হাট, রওশন হাট, খাঁন হাট, গাছবাড়িয়া, বাগিচাহাট, দোহাজারী, কেরানি হাট, আমিরাবাদসহ মহাসড়কের প্রত্যেকটি পয়েন্টে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্ট্যান্ড। এতে মহাসড়কের বড় যান চলাচলে সবসময় ব্যঘাত ঘটে। এসব পয়েন্টগুলোতে তৈরি হয় যানজটও। নানান সময়ে দুর্ঘটনায় প্রাণহানিও ঘটেছে।
তাছাড়া চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের আমজুর হাট, পটিয়া বাসস্ট্যান্ড আনোয়ারা রাস্তার মাথা, বৈলতলী রাস্তার মাথা, কমলমুন্সির হাট, রওশন হাট, খাঁন হাট, গাছবাড়িয়া, বাগিচাহাট, দোহাজারী, কেরানি হাট, আমিরাবাদসহ মহাসড়কের প্রত্যেকটি পয়েন্টে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্ট্যান্ড। এতে মহাসড়কের বড় যান চলাচলে সবসময় ব্যঘাত ঘটে। এসব পয়েন্টগুলোতে তৈরি হয় যানজটও। নানান সময়ে দুর্ঘটনায় প্রাণহানিও ঘটেছে।
বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, সিএনজি অটোরিকশার প্রথমবারের নিবন্ধন ফি (ফিটনেস, ট্যাক্সটোকেনসহ) ১১ হাজার ৯৩৯ টাকা। রুট পারমিট প্রতি তিনবছরের জন্য এক হাজার ১০৪ টাকা। এরপর প্রতিবছর ফিটনেস ফি ৪ হাজার ১৮৭ টাকা ও ট্যাক্স টোকেন ২৩০০ টাকা করে। সে হিসেবে গত ৮-১০ বছরে এসব অনিবন্ধিত অটোরিকশায় সরকার একশ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব হারিয়েছে।
চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম খোকন বলেন, দক্ষিণ চট্টগ্রামের মইজ্যারটেক হতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কসহ অন্যান্য আঞ্চলিক সড়কগুলোতে অন্তত হাজার বিশেক অনিবন্ধিত সিএনজি অটোরিকশা চলে। প্রায় ৮-১০ বছর ধরে নিবন্ধন না হওয়ার কারণে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। কারণ একটি অটোরিকশা নিবন্ধন করতে (রুট পারমিটসহ) সাড়ে ১৩ হাজার টাকা লাগে। প্রতিবছর ট্যাক্স টোকেন ও ফিটনেস নবায়ন করতে ৭-৮ হাজার টাকা খরচ হয়। স্হানীয় লোকাল টিআই, সার্জেন্ট, থানা ও ফাঁড়ির পুলিশদের সাথে কন্ট্রাক্টে চলাচল করছে অনিবন্ধিত অবৈধ এসবগাড়ি। মাঝেমধ্যে চাপের মুখে টো করলেও মোটা অংকের টাকা নিয়ে গাড়ি ছেড়ে দেয় হাইপুয়ে পুলিশ।
বিআরটিএ চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. শহীদুল্লাহ বলেন, কোন অবৈধ গাড়ির পক্ষেই আমরা নই। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কসহ আশেপাশের আঞ্চলিক সড়কে হাজার হাজার অনিবন্ধিত সিএনজি অটোরিকশা চলে। এতে সরকার রাজস্ববঞ্চিত হয়। আমরা বিআরটিএ’র পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে অনিবন্ধিত অনেক অটোরিকশা ডাম্পিং করেছি। ডকুমেন্ট হালনাগাদ না থাকায় অনেক অটোরিকশার বিরুদ্ধে মামলা জরিমানা করা হয়েছে। আগামীতেও অনিবন্ধিত গাড়ির চলাচল বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা জোনের এসপি নজরুল ইসলাম বলেন, নিবন্ধিত কিংবা অনিবন্ধিত কোন অটোরিকশাই হাইওয়েতে চলাচলের সুযোগ নেই। আমরা কাগজপত্র না থাকলে নিয়মিত মামলা দিই। গাড়ি টো করি। পরে নিবন্ধনের টাকা জমা দিলেই জরিমানা আদায় করেই গাড়িগুলো সংশ্লিষ্ট মালিকদের পক্ষে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া বিআরটিএ’র সহযোগিতা নিয়ে অনিবন্ধিত অনেক গাড়িকে ডাম্পিংও করা হয়েছে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
সিএমপির ট্রাফিক বন্দর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. তারেক আহম্মেদ বলেন, কর্ণফুলী থানাটি সিএমপির অধীনে। তবে স্হানীয় লোকজন সিএমপির অধীনে বিষয়টি স্বীকার করতে চান না। তারপরেও লোকজনকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। আমরা অবৈধ অটোরিকশাগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। কিন’ মূলসড়ক থেকে এখনো শতভাগ অটোরিকশা সরানো সম্ভব হয়নি। তাছাড়া অবৈধ অটোরিকশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে লোকাল পলিটিক্যাল লোকজন বাঁধা দেয়। নগর ট্রাফিকের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে স্হানীয়দের সাথে আমরা বৈঠকের আয়োজন করবো। অবৈধ কিংবা অনিবন্ধিত অটোরিকশাগুলোকে ছাড় দেওয়া হবে না।
সিএমপির ট্রাফিক বন্দর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. তারেক আহম্মেদ বলেন, কর্ণফুলী থানাটি সিএমপির অধীনে। তবে স্হানীয় লোকজন সিএমপির অধীনে বিষয়টি স্বীকার করতে চান না। তারপরেও লোকজনকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। আমরা অবৈধ অটোরিকশাগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। কিন’ মূলসড়ক থেকে এখনো শতভাগ অটোরিকশা সরানো সম্ভব হয়নি। তাছাড়া অবৈধ অটোরিকশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে লোকাল পলিটিক্যাল লোকজন বাঁধা দেয়। নগর ট্রাফিকের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে স্হানীয়দের সাথে আমরা বৈঠকের আয়োজন করবো। অবৈধ কিংবা অনিবন্ধিত অটোরিকশাগুলোকে ছাড় দেওয়া হবে না।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এস এম রাশিদুল হক বলেন, দক্ষিণ চট্টগ্রামে সড়কগুলোতে অনিবন্ধিত অটোরিকশা অবাধ চলাচলের বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবো। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশকে নৈতিকতার সাথে পরিচালনা করা হচ্ছে । এখানে পুলিশের বিরুদ্ধে আর্থিক কোনো অনিয়ম ও অভিযোগ সহ্য করা হবে না।
আরো পড়ুন…..