শ.ম.গফুর,উখিয়া,কক্সবাজারঃ
বাংলাদেশ সরকারের ব্যবস্থাপনায় ৪৮ হাজার রোহিঙ্গার করোনার টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে।১০ আগষ্ট সকাল ১১ টায় উখিয়ার কুতুপালংস্থ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংক্ষিপ্ত পরিসরে এই টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াত প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বেলা ১১টার দিকে কুতুপালংয়ের রোহিঙ্গা ক্যাম্প এক্সটেনশন-৪ এ আনুষ্ঠানিকভাবে এ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।এসময় ক্যাম্প প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কার্যক্রম উদ্বোধনের পর একযোগে উখিয়া ও টেকনাফের ৫৬টি টিকা কেন্দ্র থেকে রোহিঙ্গাদের টিকা দেয়া শুরু হয়। প্রতিদিন কমপক্ষে ৭ হাজার রোহিঙ্গাকে টিকা দিয়ে ৭ দিনের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের প্রথম ডোজ টিকাদান কার্যক্রম সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়েছে সরকার।
অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা বলেন, ৩৪টি ক্যাম্পে প্রথম পর্যায়ে ৫৫ বছরের উর্ধ্বে ৪৮ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা নাগরিককে করোনার টিকা দেয়া হচ্ছে বলে জানান।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের স্বাস্থ্য বিষয়ক সমন্বয়কারী ডা. আবু তোহা ভুঁইয়া বলেন, ‘আজ থেকে তিন দিন উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে মোট ৪৮ হাজার ৬০০ জন রোহিঙ্গা নাগরিককে করোনার টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে।তিনি আরও বলেন, ‘যাদের বয়স ৫৫ এবং তদূর্ধ্ব প্রথম পর্যায়ে তাদের এই টিকা দেওয়া হচ্ছে। ৩৪টি ক্যাম্পে মোট ৫৮টি টিকাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। প্রত্যেক কেন্দ্রে দু’জন প্রশিক্ষিত টিকাদানকারী এবং তিন জন স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করছেন।’
টিকাদান কেন্দ্রের কার্যক্রম তদারকির জন্য একাধিক টিম মাঠে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর ইউএনএইচসিআর-এর সহযোগিতায় সেনাবাহিনী তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের পরিচয় তালিকাভুক্ত করে। এর ভিত্তিতেই টিকা দেওয়া হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ক্যাম্পগুলোর টিকা কেন্দ্রে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিনেটর, নার্স, টেকনিশিয়ান, স্বাস্থ্য কর্মীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে আগেই।,প্রতিটি কেন্দ্রে দু’জন প্রশিক্ষিত টিকাদানকারী এবং তিনজন স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রাথমিকভাবে রোহিঙ্গাদের জন্য চীনের তৈরি সিনোফার্ম টিকার ৫০ হাজার ডোজ কক্সবাজারে মজুত করা আছে।সেখান থেকে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়।এরই মধ্যে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের দেওয়া ‘ফ্যামিলি কাউন্টিং নম্বর’ বা পরিবার পরিচিতি নম্বরের মাধ্যমে টিকা নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই এ টিকা দেয়া হচ্ছে।
গতভসোমবার সারা দিন, টিকার জন্য মনোনীত রোহিঙ্গাদের ঘরে ঘরে নিবন্ধন কার্ড পৌঁছে দিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবকেরা।করোনা সংক্রমণ শুরুর পর থেকে প্রায় ১৬ মাসে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২৭ জন এবং টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২ জনসহ মোট ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ ৮ আগস্ট পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছে উখিয়ায় ২ হাজার ১৮১ জন এবং টেকনাফে ৪৯০ জন সহ মোট ২ হাজার ৬৭১ জন রোহিঙ্গা।