মংহাইথুই মারমা, রুমা(বান্দরবান) প্রতিনিধি:
খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে সরকার কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করছে বলে জানিয়েছেন বান্দরবানে রুমা উপজেলার কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ ইউছুফ। বান্দরবানে সাতটি উপজেলার মধ্যে দুর্গম উপজেলা হচ্ছে রুমা উপজেলা। সে উপজেলায় উৎপাদন যাতে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ হতে পারে তার জন্য যথাযথ মাটি পরীক্ষা করা থেকে শুরু করে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি।
চলতি বর্ষা মৌসুমে বন্যায় কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতি বিষয়ে জানতে আজ সোমবার সকালে সৌজন্য সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন।
সরকারের পক্ষ থেকে কৃষকদের দেওয়া বিভিন্ন সহযোগিতার কথা তুলে ধরে উপ সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা বলেন, বর্গাচাষিদের হাতে বিনামূল্যে কফি,কাজুবাদাম ও আম’র চারাসহ বিভিন্ন ধরনের চারা বিতরণ করে থাকি। চলতি আগস্ট মাসে কাজুবাদাম ও কফি চারা প্রায় ১শত কৃষকদের মাঝে বিতরণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। ৫বছরের জন্য যা আমাদের পরিকল্পনা তা আমাদের বিভিন্ন ধরনের কৃষকের হাতে সুযোগ সুবিধা দেয়ার চেষ্ট করছি। রুমা উপজেলার মোট ৪হাজার ৬শত ৭০জন কৃষক রয়েছে।
তিনি বলেন, একই সঙ্গে আমরা কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ- যেটা জাতির পিতার লক্ষ্য ছিল, আমরা সেই লক্ষ্য কার্যকর করে দিচ্ছি।
সেখানে আমরা ৭০ শতাংশের উপর কৃষি-যান্ত্রিকীকরণ দিয়ে যাচ্ছি যাতে আমাদের কৃষকরা আরও অধিক পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন করতে পারে। যান্ত্রিকীকরণের জন্য হারভেস্টার থেকে শুরু করে সব ধরনের যন্ত্র আমরা ধীরে ধীরে কৃষকের হাতে পৌঁছে দেবো। আমরা উন্নতমানের বীজ সরবরাহ, প্রতিটি কৃষি-উপকরণ কৃষকদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা নিচ্ছি।
আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। কৃষক একটা মোবাইল ফোন ধরে ছবি তুলে তার ফসলের কী অবস্থা, মাটির কী অবস্থা বা মাটি পরীক্ষা করা এবং কী ধরনের সার ব্যবহার করবেন, কতটুকু ব্যবহার করবেন বা কীটনাশক ব্যবহার করবেন কিনা বা কতটুকু করবেন সব পরিমাণ পেতে পারে সেই ধরনের কৃষিতথ্য যাতে তারা পেতে পারেন সে ব্যবস্থা করছি। সেখান থেকে কৃষক তার প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন।
খাদ্য উৎপাাদন বাড়াতে সরকার গবেষণার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে জানিয়ে মোঃ ইউছুফ বলেন, আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি গবেষণার উপর। ১৯৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি, তখন থেকেই কৃষি গবেষণায় আমরা গুরুত্ব দেই। আজ গবেষণার ফলে আরও নতুন নতুন ধরনের ফসল উৎপাদন, তরি-তরকারি, ফল-মূল এবং দানাদার খাদ্যশষ্য থেকে শুরু করে সব ধরনের পণ্য যেন উৎপাদন হতে পারে তার জন্য ব্যাপকহারে গবেষণা হচ্ছে এবং উন্নতমানের বীজ আমরা কৃষকের হাতে সরবরাহ করছি।
‘ফলে আজ কৃষক খুব অল্প কষ্টে অধিক পরিমাণে খাদ্য উৎপাদন করতে পারছেন, ধান উৎপাদন করতে পারছেন, গম করছেন, ভুট্টা করছেন এবং সব ধরনের ফসল উৎপাদন করার সুযোগ পাচ্ছেন এবং তা বাজারজাত করার ব্যবস্থাও আমরা করে দিচ্ছি। ’
কৃষকদের ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিশ্চিত করতে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে । ন্যায্যমূল্য যাতে আমাদের কৃষকরা পায়, তার জন্য যথাযথ আমরা দাম নির্দিষ্ট করছি এবং কৃষকদের সহায়তা দিচ্ছি।
কৃষকের গুদামে যাতে খাদ্য সংরক্ষিত থাকে, প্রত্যেক কৃষকের ঘরে খাদ্য যেন থাকে। কারণ যারা উৎপাদন করবে তারা খাবার পাবে না বা তাদের ছেলে-মেয়েরা খাদ্যে কষ্ট পাবে এটা হতে পারে না। আমরা সে ব্যবস্থাটাও সঙ্গে সঙ্গে হাতে নিয়েছি।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তার বিষয়ে মোঃ ইউছুফ বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে যে সব কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি এবং আমরা সেই সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। এবারেও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক যদি থাকে তাহলে সে সব ধরনের সহযোগিতা পাবেন।
তিনি আরো বলেন, আমাদের রুমা উপজেলার কৃষিটাকে আমরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি এবং কৃষিভত্তিক অর্থনীতি আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাবে। কৃষি অর্থনীতির সঙ্গে সঙ্গে আমরা শিল্পের দিকেও বিশেষ নজর দিয়েছি। কারণ উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার ব্যবস্থা এবং দেশে-বিদেশে পণ্য যেন আমরা রপ্তানি করতে পারি তার ব্যবস্থা করে কৃষককে সব ধরনের সহযোগিতা আমরা দিয়ে যাচ্ছি।