বংলাদেশ একটি উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় দেশ।ধনসম্পদে ভরপুর নয়নাভিরাম ষড়ঋতুর দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে সুপরিচিত।এ দেশের ধনসম্পদে প্রলুব্ধ হয়ে বিভিন্ন রাজন্যবর্গ যেমন এদেশকে করায়ত্ব করতে চেয়েছে তেমনি অনেক সুফি-দরবেশ এ দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে স্থায়িভাবে আবাস গেড়ে এ দেশকে ধন্য ও পবিএ করেছেন। আমরা জাতি হিসেবে বাঙালি। আর বাঙালি জাতির রয়েছে কম করে হলেও হাজার হাজার বছরের পুরানো ইতিহাস ও ঐতিহ্য।
বাঙালি জাতি হিসেবে নম্র ও বিনয়ী প্রকৃতির। তারা কখনো পরের ধনের প্রতি প্রলুব্ধ হয়নি।আর বেশি ধন সম্পদের প্রতিও তাদের লোভ নেই।কিন্তু এদেশের ধনের প্রতি বিদেশীদের লোভের কেন শেষ নেই।বারবার এ দেশের মানুষ নানাভাবে প্রতারিত হয়েছে।বিদেশিনী দ্বারা শোষিত, বঞ্চিত ও প্রতারিত হয়েছে।বিশ্বের বুকে বাঙালিরাই একমাএ মায়ের ভাষার জন্য জীবন উংসর্গ করেছে।১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি অনেক ত্যাগ ও ত্রিশ লক্ষ তাজা প্রাণ, দু’লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত ও একসাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করে।
বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে প্রচীনকাল তেকে পরিচিত হয়ে আসছে।র্দীঘকাল ইংরেজ শাসন ও পরবর্তী পাকিস্তানি শাসনের কারণে এ দেশের বিপুল জনসম্পদ থাকা সত্ত্বেও শিল্পে তেমন উন্নতি লাভ করতে পারে নি।কিন্ত আধুনিকযুগ শিল্পসমৃদ্ধ যুগ হওয়ার কারনে শুধুমাত্র কৃষিতে উন্নয়ন ঘটিয়ে উন্নত বিশ্বে সামিল হওয়া সম্বব নয়।তাই মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে উন্নত বিশ্বের কাতারে যেতে হলে বাংলাদেশকেও যুগোপযোগী প্রযুক্তি সমৃদ্ধ টেকসই জ্ঞানের রাজ্য প্রবেশ করতে হবে।সেই সাথে সমাজ থেকে দুর্নীতি, নিরক্ষরতা আিনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও জবাবাদিহিমূলক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে।
কাঙ্কিত সমাজ প্রবর্তন ও জীবনমানের উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০০৮ সালের শেষদিকে আওয়ামীলীগের সভানেত্রী বড়তমান প্রধানমন্ত্রী তার নির্বাচিত ইস্তেহার এ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয় করে। তিনি আরও ঘোষণা করেন বাঙালির স্বাধীনতার সুবর্ণ- জয়ন্তী উৎযাপন উপলক্ষে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ কে ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিনত করা হবে।বিষয়টি এদেশে নতুন ও যুগোপযোগী হওয়ায় তরুন সমাজসহ সকল বয়স ও পেশার মানুষ বিসয়টিকে সহজভাবে গ্রহণ করেছে।তবে ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রথমে মানুষের স্বচ্ছ ধারনা ছিল না।বর্তমানে ও যে সঠিক ধারনা জন্মেছে তা বলা যাবে না।অনেকে মনে করে কম্পিউটারের অধিক বযবহারি হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ।
কিন্ত ডিজিটাল বাংলাদেশ গরার ক্ষেত্রে কম্পিউটার একটি সহায়ক মাত্র। আসলে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ হচ্ছে সুখী, সমৃদ্ধ, শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর দুর্নীতিমুক্ত, দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ,যা সকল প্রকার বৈষম্যহীন, প্রকৃত অর্থে জনগনের কল্যাণ রাষ্ট্র। যার মুখ্য চালিকা শক্তি হবে ডিজিটাল প্রযুক্তি। এটি বাংলাদেশের জনগনের উন্নত জীবনের আশা-আকাক্ষা।সর্বোপরি এটি একাত্তরের স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন ও আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের মাধ্যমে জাতির জনকের সোনার বাংলা গড়ার রূপকল্প।আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান নির্ভর হবে শিক্ষা পদ্ধতি।সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত হবে যুগপোযুগী শিক্ষা। শিক্ষায় কর্মমুখী শিক্ষা অর্ন্তভুক্ত হবে যাতে নিম্ন মাধ্যমিক বা মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে কোন শিক্ষার্থীকে বেকার বসে থাকতে না হয়।আধুনিক প্রযুক্তি কম্পিউটার নিভর্র তাই শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা।আশার কথা সরকার ঘোষিত বর্তমান শিক্ষার্বষ ২০১৩ থেকে সিলেবাসে যুগপোযুগী নতুন পাঠ্যসূচী অন্তর্গত করা হয়।
কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি ইউনিয়ন -ওয়ার্ড, জেলা -উপজেলাসহ সরকারের সকল স্থানীয় প্রশাসনকে ডিজিটালাইজড করা হয়েছে।গ্রামের মানুষকে এখন কোন তথ্য পেতে উপজেলা, জেলা, এবং রাজধানী শহর ঢাকা যেতে হয় না, তারা ঘরে বসে ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রে গিয়ে সব দরকারি তথ্য, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি ফরম পূরণ, বিদ্যুত বিল,টেলিফোন বিল সহ প্রয়োজনীয় সব তথ্য সংগ্রহ করতে পারে।সরকার কর্তৃক ঘোষিত ভিশন ২০২১ এর লক্ষ্যমাত্রা বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করা।তার জন্য তথ্যপ্রযুক্তি সহ কৃষিপণ্য, শিল্পপণ্য, গার্মেন্টস ও সেবাখাতের রপ্তানি কে ব্যপকভাবে উৎসাহিত করতে হবে।
এসকল খাতে যাতে দক্ষ লোক তৈরি হয় সে দিকে লক্ষ্য রেখে কারিগরি ট্রেনিং সেন্টার বা কারিগরি স্কুক কলেজ ব্যপকভাবে বৃদ্ধি করতে হবে।মেধা সৃষ্টি ও সুরক্ষা র জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। আর খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা সরকারের লক্ষ্য।এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে আধুনিক বীজসার, রোগ-বালাই সম্পর্কে যাতে প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত।আশার কথা হল এখন মোবাইল ফোনে ডায়েল করেও কৃষি বিষয়ে প্রয়োজনীয় খবর জানতে পারে।
সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয় ওবিভাগসমূহ তাদের সকল কাজ ডিজিটালাইজড করেছে। মানুষ যাতে ঘরে বসে সব খবর পেতে পারে তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।শিক্ষা বোর্ড ও তাদের সকল কার্যক্রম অনলাইন ভিত্তিক করায় ছাত্রছাত্রীদের রেজিস্ট্রেশন,ফরমফিলাপ,এডমিটকার্ড,রেজাল্ট ও পরীক্ষার খাতা,পুনঃনিরীক্ষণ করার জন্য এখন আর কাউকে অর্থ ব্যয় করে বোর্ডে যেতে হয় না।নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ টিটি বা মোবাইলের মাধ্যমে তারা যাবতীয় খবর পাচ্ছে।সময়ের যেমন সাশ্রয় হয়েছে তেমনি ভুলভ্রান্তি ও অনেক কমে গেছে।
আইনমন্ত্রনালয় তাদের ওয়েবসাইটে যুগোপযোগী আইন ও তার ব্যাখ্যা করে জনগনকে আিন আদালত সম্পর্কে সচেতন করছে।পরির্বতন অবস্থার সাথে নতুন ধরনের অপরাধ, সাইবার ক্রাইম,সাইবার কমুনিকেশন,ডিজিটাল লাইফস্টাইল,ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে নতুন নতুন আইন তৈরি হয়েছে এবং জনগনকে সে বিষয়ে অবহত করেছে।সহজে অপরাধী কে নির্ণয় করা যাচ্ছে,তাছাড়া অনলাইনে বিচার প্রার্থী করার সাথে সাথে তার মামলাটি কোথায় কী অবস্তায় আছে জানা যাচ্ছে।
আজ আর কোন তথ্য জানার জন্য স্তূপকৃত বইয়ের লাইব্রেরিতে যেতে হয় না,সময় নস্ট করে হাজার হাজার বইয়ের পাতা ঘাটারও প্রয়োজন নেই,ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বের সব কিছু জানতে পারে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে।সেখান থেকে মুক্তিযুদ্ধের বিস্তারিত তথ্য যেমন সংগ্রহ করা যায় তেমনি যে কোন বিষয়ে অতি সহজে ধারণা পাওয়া যায়।এখন আর ছোট্ট শিশুটিকে একগাদা বইয়ের ব্যাগ নিয়ে স্কুলে যেতে হবে না,ছোট্ট একটি কম্পিউটার হবে তার সকল জ্ঞানের উৎস।
যে জিনিসের উপকার আছে সে জিনিসের অপকারের দিক ও অবশ্যই আছে।ইন্টারনেটে সহজে এখন পর্ণসামগ্রী অতি সহজে হাতের নাগালে পাওয়া যাচ্ছে।এ সকল পর্ণ যদি তরুণতরুণীদপর আকৃষ্ট করপ তবে আমাদের জাতীয় জীবনকে ধ্বংস করতে পারে,আজ নানা ধরনের অপকর্ম, ধর্ষণের প্রভাব বেড়ে চলেছে দিনদিন,অন্যদিকে উর্পাজন করুন এমন চটকার বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে মেধা,সময় ও অর্থ হারাচ্ছে।নিজেদের বিচারবিবেচনায় এ সকল বিষয় দূরে রাখতে হবে নতুবা ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরোপুরি ভিশন ২০২১ সফল হবে না।
আমি আগে বলেছি বাংলাদেশ একটি অমিত সম্ভনার দেশ,এদেশে আছে বিপুল সম্ভবনাময় তরুণতরুণী সমাজ।ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে তাদের এগিয়ে আসতে হবে।বুকে লালন করতে হবে ভিশন -২০২১। যে জাতি ভাষার জন্য রক্ত দিতে পারে,যে জাতি স্বাধীনতার জন্য ত্রিশলক্ষ তাজ প্রাণ দিতে পারে তাদের এ আত্নদান ব্যর্থ হতে পারে না।আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়বো ইনশাল্লাহ। ২০২১ সাল তোমাকে অগ্রিম সালাম জানাই,কারণ আমাদের দেশ হবে ডিজটাল বাংলাদেশ।
লেখক: আয়েশা সিদ্দিকা
রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।