llআলী আকবর,লোহাগড়াll
আইন পেশায় ৪০ বছর পেরিয়েছেন আরও আগেই। ক্লান্তি ভূলে অবিরাম তার পথ চলা। এখনও ছুটে বেড়ান শহর থেকে গ্রামের জন পদে, মানুষের কাছে। আইনজীবী ও সাধারণ মানুষের কল্যাণে ব্যাস্ত রাখছেন নিজেকে। এভাবে জীবনের ৬৫ টি বসন্ত কাটিয়েও আরো কাজ করতে চান চট্টগ্রাম আদালতের সর্বজন শ্রদ্ধেয় সিনিয়র আইনজীবী মোঃ ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী (বাবুল)। তিনি মনে করেন কর্মেই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। সবার উচিত নিজ নিজ অবস্থান থেকে সাধারণ জনগণের জন্য কিছু করা। এড. ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী (বাবুল) বর্তমানে আইন পেশার পাশাপাশি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামীলীগে সহ-সভাপতির দায়িত্ব আন্তরিকতার সাথে পালন করে যাচ্ছেন। ১৯৮০ সালে আইনজীবী হিসেবে সনদ লাভ করে চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সদস্য ভূক্ত হন। ১৯৮৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে সনদ লাভ করেন। আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ১৯৮৫ সালে সহ- সম্পাদক, ১৯৯১ সালে সাধারণত সম্পাদক, ২০০৪ সালে বিপুল ভোটে সভাপতি এবং ২০১৫ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নির্বাচনে সি অঞ্চল থেকে সদস্য নির্বাচিত হন। আইন সংগঠনের দায়িত্ব পালন কালে তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন আইনজীবীদের কল্যানে কাজ করতে। কর্মনিষ্ঠা ও সেবাই একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী (বাবুল) অনেকের জন্য আর্দশ বটে। বিভিন্ন আন্দোলন, মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক, সামাজিক ও কর্মজীবন নিয়ে ১৫ ই ডিসেম্বর বিকেলে তার নন্দন কানন নিজ বাসায় অত্র প্রতিবেদক কে একান্ত সাক্ষাতকার দেন । আন্দোলন ও মুক্তিযোদ্ধা সম্পর্কে বলেন, ৬৮/৬৯ সালে স্বৈরাচার আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের সময় প্রগতিশীল বাম ছাত্র সংগঠনের একজন সক্রিয় কর্মী হিসাবে ছাত্র রাজনীতিতে যোগদান করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চারভাই সহ ইসলামী ছাত্র সংঘ পাকিস্তানী বাহিনী দ্বারা গ্রেফতার হয়ে চট্টগ্রাম ষ্টেডিয়াম বর্তমানে এম.এ আজিজ ষ্টেডিয়াম পাক হানাদার বাহিনীর হাতে আটক ছিলেন। পরবর্তীতে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করার জন্য ট্রেনিং এর উদ্দেশ্যে ভারতে চলে যান। যাওয়া সময় এক খানা ৮ লাইনে চিঠি লিখে যান পরে চিঠিতে বাবুল যা লিখেছেন তার ভয়ে পরিবার চিঠিটি পুড়ে পেলেন । ১৯৭১ সালে ভারতে ট্রেনিং নিয়ে ২নং সেক্টরে সম্মুখ যুদ্ধে (গেরিলা যুদ্ধে) অংশ গ্রহন করেন। যুদ্ধের সময় এক পর্যায়ে ডিসি হিলে পাক বাহিনীর সামনে পড়ে, নিজে গুলি খেয়ে পার পেলেও, সে সময় ৩ জন মারা যায়। সে দিন হানাদার বাহিনীর মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ফিরে এসেছি । মনে হয় মাষ্টার দা সূর্য সেনের পর রাইফেল ক্লাব অস্ত্র লুট ছিল দ্বিতীয়। তখন আমার সাথে ছিল, অহিদুল আলম,আল্লামা ইকবাল, নুরু, বিকাশ, শামসুদ্দিন আহমেদ, নুরুল হুদা, আবু, জয়নাল উদ্দিন রাজা সহ অনেকে । ১৯৭৩ইং সালে পূর্ব বাংলার ছাত্র ইউনিয়ন (নগর) সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর আলহাজ্ব এ.বি.এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সাথে আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহন করেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের মানসকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮৮ সালের ২৪ শে জানুয়ারী বিজ্ঞ আইনজীবীদের সাথে মতবিনিময় এবং লালদীঘি জনসভায় যোগ দেওয়ার জন্য আসার পথে কোতোয়ালী থানা পার হওয়ার পর অবৈধ এরশাদ সরকার এর নির্দেশিত পুলিশ বাহিনীর মাধ্যমে আক্রান্ত হলে মোঃ ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী (বাবুল) এর নেতৃত্বে আরও আইনজীবী নেত্রীর ট্রাকটিকে পুলিশ বাহিনী থেকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম আদালত ভবনে নিয়ে আসে; ১৯৮৮ সালের ২৪ শে জুন হত্যা মামলার একজন সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য প্রদান পূর্বক উক্ত মামলাটি পরিচালনা করে ২০শে জানুয়ারী ২০২০ সালে মামলার আসামীদের মৃত্যুদন্ড নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভুমিকা পালন করেন। ডাঃ টি. হোসেন চৌধুরী ও জোবায়দা খাতুনের এই রত্ন আরো বলেন, ১৯৯৪ সালে ২৬ শে জুলাই লালদীঘি ময়দানে গোলাম আজমের সভাকে প্রতিহত করতে গিয়ে জামায়াত শিবির কর্তৃক দায়েরকৃত হত্যা মামলার আসামী হই। তিনি রাজনৈতিক কারনে জীবনে বহুবার কারাবরনও করেন। সর্বশেষ ২০০৭ সালে ১/১১ এর সময়ে জরুরী অবস্থা ভঙ্গ করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলন করতে গিয়ে যৌথ বাহিনীর কর্তৃক আটক হয়ে কারাবরন করেন। বীর এই মুক্তিযোদ্ধা চট্টগ্রামের সুপ্রতিষ্ঠিত ক্রীড়া সংগঠন ফ্রেন্ডস ক্লাবের ১৯৯১ সাল হতে বহু বৎসর পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। যে, ক্লাব থেকে জাতীয় ক্রিকেটার জনাব আকরাম খাঁন সহ আরো অনেকে বিভিন্ন ইভেন্টে খ্যাতিমান খেলোয়াড় হিসেবে মর্যাদা সহকারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৯২ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ঘাতাক দালাল নির্মূল সমন্বয় কমিটি চট্টগ্রাম জেলা শাখার সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, জাতীয় সমন্বয় পরিষদের সদস্য সচিব হিসাবে ১৯৯২ সাল হতে দায়িত্ব পালন করেন। হাটহাজারীর এই সন্তান ২০০১ সালে চট্টগ্রাম নির্বাচনী এলাকা হাটহাজারী-৫ হতে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন। বিভিন্ন সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সংগঠনের দায়িত্ব পালন প্রসঙ্গে ১৯৫৫ সালে জন্ম নেওয়া এই সূর্য সন্তান বলেন,১৯৮৫ সালে সম্মিলিত পেশাজীবি সংগ্রাম পরিষদ চট্টগ্রাম শাখার সদস্য সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯২ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ঘাতাক দালাল নির্মূল সমন্বয় কমিটি চট্টগ্রাম জেলা শাখার সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন । আঞ্জুমান রহমানিয়া সুন্নিয়া ট্রাষ্ট এর একজন উপদেষ্টা কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামীলীগের সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক; তৎকালীন মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক কাজী এনামুল হক দানু ইন্তেকাল করলে তার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে ২০১৩ সালে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সাল থেকে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন । এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে সক্রিয় ভাবে জড়িত আছেন। বিজ্ঞ আইনজীবীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সব সময় সক্রিয় ভূমিকা রেখে আসছেন। বর্তমানে এছাড়াও দেশে মহামারী করোনা কালীন সময়ে নিজ উদ্যাগে অক্সিজেন, মাস্ক সহ বিভিন্ন সুরক্ষা সামগ্রী বিভিন্ন স্থানে বিতরন করে আসছেন গরীবের এই আইনজীবী।